ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তাদের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করত। তবে আন্দোলন চলাকালে গত জুলাইয়ে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হয়। এমতাবস্থায় ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পরে প্রকাশ্যে এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কমিটি আছে এবং সেই কমিটির সভাপতি সাদিক কায়েম। এদিকে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেয়ার পর গণমাধ্যমে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সাদিক। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে।
কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের মিথস্ক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম পরিবেশ পরিষদে ১৯৯০ সালে শিবির ও জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে না দেওয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শনিবার আলোচনার প্রথম পর্বে অংশ নেন শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক। এই পর্বে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতারা।
মতবিনিময় সভায় শিবিরের পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পরিবর্তে সংস্কার ও অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করা হয়।
সভা শেষে সাদিক গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নয়। তাঁরা সব ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে সংলাপের আয়োজন করতে বলেছেন, যেখানে ফ্যাসিবাদের দোসর ছাড়া সব ছাত্রসংগঠন আসবে।
শিবির মেধাভিত্তিক রাজনীতি চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকে প্রত্যেকের রাজনৈতিক চর্চা করবে, সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না, সেটাই আমাদের চাওয়া।’
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনকে ফ্যাসিবাদের দোসর উল্লেখ করে সাদিক বলেন, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
সাদিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তাঁর স্নাতকোত্তর শেষ। তিনি থাকতেন মাস্টারদা সূর্য সেন হলে। গত জানুয়ারিতে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হওয়ার আগে তিনি সংগঠনের সূর্য সেন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সাদিকের সঙ্গে শনিবার মতবিনিময় সভায় শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক নেতা রেজাউল ইসলাম অংশ নেন। তবে রেজাউলের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি। সাদিক ও রেজাউল ছাড়া শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্য নেতাদের কারও পরিচয় এখনো সামনে আসেনি।
কমিটির বিষয়ে সাদিক গতকাল রোববার দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কমিটি খুব দ্রুত প্রকাশ করা হবে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকার তাঁদের আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিকস (গোপনে রাজনীতি) করতে বাধ্য করেছে।
ছাত্রলীগ বিতাড়িত হওয়ার পর এখন শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ব্যানারে রাজনীতি করছে এবং হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে—কারও কারও এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাদিক বলেন, শিবিরের সমর্থকদের বেশির ভাগ হলের বাইরে থাকেন। কিছু নিয়মিত শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারেন। গোপনে শিবির সব নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা ঠিক নয়।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ শনিবারের মতবিনিময় সভায় উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি কীভাবে তাঁকে (শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি) খুঁজে পেলেন?’
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান তাঁর এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মাঈন আহমেদ। মাঈন ছাড়াও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ (বাসদ) কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠনের নেতারা সভায় শিবিরের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন প্রভাব আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। ছাত্রদলের সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে। বাম ছাত্রসংগঠনগুলোও সক্রিয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান হলো, তারা ক্যাম্পাসে কোনো দলের ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আপত্তি আছে। তবে নেতারা এখনই প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন।
ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা আজ নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশ করতে হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এবং অন্যান্য অংশীজন মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor